হাইকোর্টের আদেশের তিন দিন পরও চাকরি হারানো র্যাবের সেই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ কোনো অভিযান চালায়নি। শুধু আদেশ মানতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে তারা। মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন কর্মকর্তা সেনানিবাসে আছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সেখানে গিয়ে অভিযান চালানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। আদালতের আদেশের পরও কেন গ্রেপ্তার অভিযান হচ্ছে না, জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, আদালত যেভাবে আদেশ দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে মানা হচ্ছে। আদেশ অনুসারেই পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, গ্রেপ্তার এড়াতে র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা আজ উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। তাঁদের স্বজনেরা আইনগত সহায়তা চেয়ে কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১১ মে হাইকোর্টের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, দণ্ডবিধি বা বিশেষ কোনো আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে হবে। নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় এই তিন কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে৷ অভিযোগ ওঠার পর র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, মেজর আরিফ হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম এম রানাকে অবসর দেওয়া হয়। এঁদের মধ্যে সেনাবাহিনীর দুজনকে অকালীন ও নৌবাহিনীর একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, আদালত আদেশ দিলেও তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কোনো সবুজ সংকেত মেলেনি৷ এ কারণে শুরু থেকেই পুলিশ 'ধীরে চলো' নীতি অনুসরণ করছে। এ জন্যই আদালতের আদেশ হাতে পাওয়ার পর গ্রেপ্তার অভিযান না করে সহায়তা চেয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। ওই মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সোমবার বিকেলের দিকে মন্ত্রণালয় পুলিশের চিঠি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল ছুটি থাকায় এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের চিঠিটি আজ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে পাঠানো হবে। এরপর সেই চিঠি যাবে সেনা ও নৌবাহিনীর হাতে। অভিযানের ব্যাপারে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, পুলিশ কোনো কালক্ষেপণ করছে না। আইন মেনেই সব করছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, তিন দিনেও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার না হওয়ায় শুধু আইনজীবী নন, নারায়ণগঞ্জের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, হতাশা ও বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও পরিবহন চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক রফিকুল ইসলাম রতনকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। নূর হোসেনের অন্য সহযোগীদের তালিকা তৈরি করে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এরপর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যায় একে একে ছয়জনের এবং পরদিন আরও একজনের লাশ ভেসে ওঠে৷
Custom Search
Wednesday, May 14, 2014
খুনের সঙ্গে ১৮ জন জড়িত? by তানভীর সোহেল @প্রথম আলো
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় অন্তত ১৮ জন জেনে বা না জেনে যুক্ত হয়েছিলেন। এর পক্ষে প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। না জেনে জড়িত থাকা বলতে পুলিশ তাঁদেরকে বুঝিয়েছে, যাঁরা অন্যের আদেশ অনুসরণ করেছেন মাত্র। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ পুরো ঘটনাটি দুই ভাগে ভাগ করে তদন্ত করছে। প্রথম ভাগে অপহরণ ও খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ভাগে যাঁরা খুনের নির্দেশ দিয়েছেন তাঁদের চিহ্নিত করা হবে। প্রথম ধাপের তদন্তে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ গুছিয়ে এনেছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, যাঁরা খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। তদন্তকারীরাও ধরে নিচ্ছেন, নিহতদের সঙ্গে এক বা একাধিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে শত্রুতার কারণে একটি গোষ্ঠী অর্থের বিনিময়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ জন্য সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সে বিষয়টি উদ্ঘাটনে গুরুত্ব দিচ্ছে তদন্ত দল। এই কর্মকর্তারা বলেন, খুনের সঙ্গে জড়িতরা কোনো বাহিনীর কি না, তা বিবেচ্য বিষয় নয়। এখন পর্যন্ত খুনের সঙ্গে জড়িত থাকা যাঁদের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়টি এখন সামনে চলে এসেছে। এমন কিছু লোকের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে, যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসাটা জরুরি।
ঘটনার প্রথম অংশে খুন হওয়া নজরুল ইসলামকে আদালত চত্বরে সাদা পোশাকে অনুসরণ করা এক ব্যক্তি এবং তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়া অপর এক ব্যক্তিকেও চিহ্নিত করেছে বলেও দাবি করেছে পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র। এ ছাড়া অপহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি গাড়ির চালকের সঙ্গেও তদন্তকারীরা কথা বলেছেন। ঘটনার দ্বিতীয় অংশে আছে, প্রথমে পাঁচজন ও পরে দুজনকে অপহরণের ঘটনা। তৃতীয় অংশ হলো, অপহৃতদের একটি স্থানে নিয়ে রাখা ও হত্যা করা। চতুর্থ অংশ, লাশগুলো শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা। এই চারটি পর্বে ১৮ জনের কারও না কারও উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে পুলিশের তদন্তকারী দলের সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সূত্র জানায়, অপহরণের পর অপহৃতদের নারায়ণগঞ্জ শহরের কাছেই একটি স্থানে রাখা হয় বলে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন। সেখানেই সাতজনতে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। সেই স্থানটিও চিহ্নিত করা হয়েছে৷ তবে ওই স্থানে প্রবেশ করে তদন্ত করতে হলেও অনুমতির প্রয়োজন বলে তাঁরা জানান।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত পুলিশ অপহরণের জন্য ব্যবহৃত তিনটি মাইক্রোবাস চিহ্নিত করেছে। এগুলো এখন তদন্তকারীদের নজরদারিতেই আছে। তবে যে দুটি নৌকায় করে সাতজনের লাশ শীতলক্ষ্যায় ডোবানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে খবর আছে, সেই দুটি নৌকার মালিক ও দুজন মাঝির ব্যাপারে তদন্ত দল এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পায়নি। জানা গেছে, নিহত নজরুলের শ্বশুরের অভিযোগের কারণে সম্প্রতি অবসরে পাঠানো র্যাব-১১-এর সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের ওই দিনের মোবাইলে যোগাযোগ, এর আগের কয়েক দিনের ফোনের কললিস্ট, তাঁদের অবস্থান এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা 'ব্যাকম্যান-রানার'দের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা।
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম পার হয়ে দুই শ গজ সামনে থেকে গাড়িচালক, তিন সহযোগীসহ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকার এবং তাঁর গাড়িচালককে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর তাঁদের ছয়জন এবং পরদিন আরেকজনের মৃতদেহ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে। র্যাব-১১-এর কয়েকজন কর্মকর্তাকে দিয়ে নজরুলের প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে নজরুলের পরিবার দাবি করে আসছে। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত নিয়ে তিনি গণমাধ্যমের সামনে এখনই কিছু বলতে পারবেন না। তবে তিনি বলেন, তদন্তে ভালো অগ্রগতি আছে। তদন্ত সঠিক পথেই চলছে। তদন্তে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, তদন্ত অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে পুলিশ। এখন অভিযোগ ওঠা র্যাবের ওই সময়কার কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা পেলেই তদন্ত শেষ করে আনার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পেরোতে পারবেন তাঁরা। ওই সূত্রটি জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কিছু সন্দেহভাজনকে তাঁরা চিঠি দিয়েছেন।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কেবল তারাই যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার অপেক্ষা করছেন, তা নয়। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটিও প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা তদন্তের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্ত-প্রক্রিয়ায় জানা প্রয়োজন এমন অন্তত ২০টি প্রশ্ন করা হলে একজন গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এসব প্রশ্নের বেশির ভাগেরই উত্তর তাঁরা ইতিমধ্যে বের করতে সক্ষম হয়েছেন। যাঁদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে সব প্রশ্নের জবাব এক করে পুরো ঘটনার একটি 'মালা গাঁথা' সম্ভব হবে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা মামলার পর্যাপ্ত আলামত সংগ্রহ করেছেন। প্রমাণাদিও যতটা সম্ভব সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কাজ অব্যাহত থাকবে।
সাত খুনের ঘটনার সাত দিন পর মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বাড়িতে তল্লাশি এবং কয়েকজন আত্মীয়কে গ্রেপ্তার, মাইক্রোবাস আটক, নূর হোসেনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ, ট্রাকস্ট্যান্ডে তল্লাশি করে মদ ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে কেবল নূর হোসেনের বাড়িতে তল্লাশি করাকে তদন্তকাজের অংশ বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। র্যাব-১১-এর সদস্যদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) মোকলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কে জড়িত সেটা বিষয় নয়, যাঁরাই জড়িত তাঁদের বিচার হবে। তিনি বলেন, র্যাবের বিষয়টি আসায় তাঁরা ইতিমধ্যে একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে তদন্ত করাচ্ছেন। তাঁর প্রতিবেদন পেলে এ ব্যাপারে কথা বলা যাবে।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, যাঁরা খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। তদন্তকারীরাও ধরে নিচ্ছেন, নিহতদের সঙ্গে এক বা একাধিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে শত্রুতার কারণে একটি গোষ্ঠী অর্থের বিনিময়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ জন্য সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সে বিষয়টি উদ্ঘাটনে গুরুত্ব দিচ্ছে তদন্ত দল। এই কর্মকর্তারা বলেন, খুনের সঙ্গে জড়িতরা কোনো বাহিনীর কি না, তা বিবেচ্য বিষয় নয়। এখন পর্যন্ত খুনের সঙ্গে জড়িত থাকা যাঁদের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়টি এখন সামনে চলে এসেছে। এমন কিছু লোকের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে, যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসাটা জরুরি।
ঘটনার প্রথম অংশে খুন হওয়া নজরুল ইসলামকে আদালত চত্বরে সাদা পোশাকে অনুসরণ করা এক ব্যক্তি এবং তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়া অপর এক ব্যক্তিকেও চিহ্নিত করেছে বলেও দাবি করেছে পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র। এ ছাড়া অপহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি গাড়ির চালকের সঙ্গেও তদন্তকারীরা কথা বলেছেন। ঘটনার দ্বিতীয় অংশে আছে, প্রথমে পাঁচজন ও পরে দুজনকে অপহরণের ঘটনা। তৃতীয় অংশ হলো, অপহৃতদের একটি স্থানে নিয়ে রাখা ও হত্যা করা। চতুর্থ অংশ, লাশগুলো শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা। এই চারটি পর্বে ১৮ জনের কারও না কারও উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে পুলিশের তদন্তকারী দলের সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সূত্র জানায়, অপহরণের পর অপহৃতদের নারায়ণগঞ্জ শহরের কাছেই একটি স্থানে রাখা হয় বলে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন। সেখানেই সাতজনতে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। সেই স্থানটিও চিহ্নিত করা হয়েছে৷ তবে ওই স্থানে প্রবেশ করে তদন্ত করতে হলেও অনুমতির প্রয়োজন বলে তাঁরা জানান।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত পুলিশ অপহরণের জন্য ব্যবহৃত তিনটি মাইক্রোবাস চিহ্নিত করেছে। এগুলো এখন তদন্তকারীদের নজরদারিতেই আছে। তবে যে দুটি নৌকায় করে সাতজনের লাশ শীতলক্ষ্যায় ডোবানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে খবর আছে, সেই দুটি নৌকার মালিক ও দুজন মাঝির ব্যাপারে তদন্ত দল এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পায়নি। জানা গেছে, নিহত নজরুলের শ্বশুরের অভিযোগের কারণে সম্প্রতি অবসরে পাঠানো র্যাব-১১-এর সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের ওই দিনের মোবাইলে যোগাযোগ, এর আগের কয়েক দিনের ফোনের কললিস্ট, তাঁদের অবস্থান এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা 'ব্যাকম্যান-রানার'দের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা।
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম পার হয়ে দুই শ গজ সামনে থেকে গাড়িচালক, তিন সহযোগীসহ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকার এবং তাঁর গাড়িচালককে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর তাঁদের ছয়জন এবং পরদিন আরেকজনের মৃতদেহ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে। র্যাব-১১-এর কয়েকজন কর্মকর্তাকে দিয়ে নজরুলের প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে নজরুলের পরিবার দাবি করে আসছে। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত নিয়ে তিনি গণমাধ্যমের সামনে এখনই কিছু বলতে পারবেন না। তবে তিনি বলেন, তদন্তে ভালো অগ্রগতি আছে। তদন্ত সঠিক পথেই চলছে। তদন্তে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, তদন্ত অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে পুলিশ। এখন অভিযোগ ওঠা র্যাবের ওই সময়কার কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা পেলেই তদন্ত শেষ করে আনার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পেরোতে পারবেন তাঁরা। ওই সূত্রটি জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কিছু সন্দেহভাজনকে তাঁরা চিঠি দিয়েছেন।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কেবল তারাই যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার অপেক্ষা করছেন, তা নয়। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটিও প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা তদন্তের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্ত-প্রক্রিয়ায় জানা প্রয়োজন এমন অন্তত ২০টি প্রশ্ন করা হলে একজন গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এসব প্রশ্নের বেশির ভাগেরই উত্তর তাঁরা ইতিমধ্যে বের করতে সক্ষম হয়েছেন। যাঁদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে সব প্রশ্নের জবাব এক করে পুরো ঘটনার একটি 'মালা গাঁথা' সম্ভব হবে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা মামলার পর্যাপ্ত আলামত সংগ্রহ করেছেন। প্রমাণাদিও যতটা সম্ভব সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কাজ অব্যাহত থাকবে।
সাত খুনের ঘটনার সাত দিন পর মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বাড়িতে তল্লাশি এবং কয়েকজন আত্মীয়কে গ্রেপ্তার, মাইক্রোবাস আটক, নূর হোসেনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ, ট্রাকস্ট্যান্ডে তল্লাশি করে মদ ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে কেবল নূর হোসেনের বাড়িতে তল্লাশি করাকে তদন্তকাজের অংশ বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। র্যাব-১১-এর সদস্যদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) মোকলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কে জড়িত সেটা বিষয় নয়, যাঁরাই জড়িত তাঁদের বিচার হবে। তিনি বলেন, র্যাবের বিষয়টি আসায় তাঁরা ইতিমধ্যে একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে তদন্ত করাচ্ছেন। তাঁর প্রতিবেদন পেলে এ ব্যাপারে কথা বলা যাবে।
ছাত্রলীগের সন্ত্রাস- এখনই রাশ টেনে ধরতে হবে
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা—কোথায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী হাত নেই? চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে অবরোধ এবং সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে ঝুলছে তালা৷ রাঙামাটিতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষেও তারা ছিল সামনের সারিতে৷ সাম্প্রতিক সময়ে দেশময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ভূমিকা থেকে বোঝার উপায় নেই, তারা কি বৃহত্তম ছাত্রসংগঠন, নাকি একটি অপরাধী চক্র? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীকে অপহরণ ব্যবসায় জড়িত থাকতে দেখা গেছে৷ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের নির্যাতনে নিহত হয়েছেন এক ছাত্র৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের অন্তঃকোন্দলে কিছুদিন পর পরই কেউ না কেউ নিহত হচ্ছেন৷ গত মঙ্গলবারের প্রথম আলোয় দেখা যাচ্ছে, রাঙামাটিতে আওয়ামী লীগেরই দুই পক্ষের টেন্ডার-দখলের মারামারিতে লাঠিয়ালের ভূমিকায় ব্যবহৃত হয়েছে ছাত্রলীগ৷ ছাত্রলীগে এখন ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় দশা৷
দীর্ঘ ঐতিহ্যের দাবিদার ছাত্রসংগঠনের এমন পরিণতি নিয়ে কি কিছু ভাবছে আওয়ামী লীগ? সবখানেই আওয়ামী লীগ-যুবলীগের প্রভাবশালী নেতারা ব্যবসা-দখলদারি, টেন্ডারবাজি, এলাকায় দাপট ইত্যাদি কারণে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, অস্ত্রবণিক থেকে শুরু করে অন্ধকার জগতের হেন শক্তি নেই, যারা ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছে না! বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের কাজ উন্নয়ন ও নিয়োগ-বাণিজ্যের বখরা আদায়৷ এই বখরা আদায়ের জন্যই তারা লিপ্ত হয় গ্রুপবাজির সংঘাতে৷ এই অবস্থায় ছাত্রলীগ আর ছাত্রদের অধিকার রক্ষা কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়নের সহায়ক হয়ে নেই৷ সন্ত্রাস-দুর্নীতি-অপরাধের লাঠিয়াল হিসেবে তাদের দ্বারা কল্যাণকর কিছু করা আর কিছু সম্ভব কি না, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন৷ কেবল ছাত্রলীগ নয়, ছাত্রদল, জাতীয় ছাত্র সমাজ ও ছাত্রশিবিরের অবস্থাও অতীতে এ রকমই ছিল; ভবিষ্যতেও ভিন্ন কিছু হবে, তেমন আশা করার কারণ নেই৷ ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ না হলে ছাত্ররাজ
দীর্ঘ ঐতিহ্যের দাবিদার ছাত্রসংগঠনের এমন পরিণতি নিয়ে কি কিছু ভাবছে আওয়ামী লীগ? সবখানেই আওয়ামী লীগ-যুবলীগের প্রভাবশালী নেতারা ব্যবসা-দখলদারি, টেন্ডারবাজি, এলাকায় দাপট ইত্যাদি কারণে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, অস্ত্রবণিক থেকে শুরু করে অন্ধকার জগতের হেন শক্তি নেই, যারা ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছে না! বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের কাজ উন্নয়ন ও নিয়োগ-বাণিজ্যের বখরা আদায়৷ এই বখরা আদায়ের জন্যই তারা লিপ্ত হয় গ্রুপবাজির সংঘাতে৷ এই অবস্থায় ছাত্রলীগ আর ছাত্রদের অধিকার রক্ষা কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়নের সহায়ক হয়ে নেই৷ সন্ত্রাস-দুর্নীতি-অপরাধের লাঠিয়াল হিসেবে তাদের দ্বারা কল্যাণকর কিছু করা আর কিছু সম্ভব কি না, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন৷ কেবল ছাত্রলীগ নয়, ছাত্রদল, জাতীয় ছাত্র সমাজ ও ছাত্রশিবিরের অবস্থাও অতীতে এ রকমই ছিল; ভবিষ্যতেও ভিন্ন কিছু হবে, তেমন আশা করার কারণ নেই৷ ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ না হলে ছাত্ররাজ
Subscribe to:
Posts (Atom)