Custom Search

Thursday, May 1, 2014

যুক্তরাষ্ট্রে বেশির ভাগের ‘মে দিবসের’ ধারণা নেই

যুক্তরাষ্ট্র থেকে মে দিবসের শুরু। কিন্তু দেশটির বেশির ভাগ মানুষেরই মে দিবস সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। যে শিকাগো শহরের হে মার্কেট এলাকার  রক্তক্ষয়ী ঘটনা থেকে সারা বিশ্বে শ্রমিক সংহতির জাগরণ, সেই শহরেও মে দিবসের কোনো ছায়া নেই। প্রতিদিনের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ১ মে আরেকটি কর্মযজ্ঞের দিন। 'আজ মহান মে দিবস' শিরোনামে কোনো পত্রিকার ক্রোড়পত্রও চোখে পড়েনি। গণমাধ্যমগুলো বহির্বিশ্বের মে দিবস পালনের দায়সারা সংবাদ প্রচার করছে। শিকাগোর হে মার্কেটে ১২৮ বছর আগের রক্তাক্ত সেই ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আজকের শ্রমিক সমাজ আর তেমন করে ভাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের  বড় বড় শহরে কিছু সাংগঠনিক কর্মসূচি থাকলেও দিবসটির আয়োজনে সাধারণ কর্মজীবীদের তেমন সংশ্লিষ্টতা নেই।

হে মার্কেটে শ্রমিক অসন্তোষের জের ধরে ১৮৯৪ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারিভাবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবার 'লেবার ডে' হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। মে দিবসকে 'আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস' হিসেবে গ্রহণের ১২৫ বছর পূর্তি হচ্ছে এবার। সারা বিশ্বে, বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক ঘরানার দেশগুলোতে দিবসটি নিয়ে সাজ সাজ অবস্থা। বিশ্বের শ্রমজীবীরা নিজেদের অধিকার নিয়ে বিশাল সব সমাবেশ থেকে আবার একসঙ্গে আওয়াজ তুলছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এর কোনো ছাপ নেই। কলকারখানা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—কোথাও চোখে পড়ার মতো কোনো অনুষ্ঠান নেই।

মে দিবস উপলক্ষে নিউইয়র্কের ইউনিয়ন স্কয়ার এলাকায় অকুপাই আন্দোলনের মাত্র ১০ জন সদস্য জড়ো হয়েছেন। মার্টিন হল নামে একজন জানান, যুক্তরাষ্ট্রে এখন আয়ের ভারসাম্য চরমে পৌঁছেছে। মধ্যবিত্তরা দিন দিন বিত্তহীন হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থার পক্ষে নিজের অবস্থান জানাতে তিনি মে দিবসে ইউনিয়ন স্কয়ারে গেছেন। তিনি জানান, তিনি গত তিন বছর কর্মহীন।

নিউজার্সির টেমস রিভার এলাকায় বিশাল শপিং মলে কাজ চলছে নিত্যদিনের মতো। দোকানের কর্মচারী জুডি স্টানকো (৫৮) জানান, মে দিবস মার্কিস্টদের উত্সবের দিন। তিনি জীবনে কখনো মে দিবসের কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।  রেস্টুরেন্টের কর্মচারী টম ব্রাডি বলেন, ৪০ বছরের কর্মজীবনে মে দিবস নামের কোনো অনুষ্ঠানে তাঁকে কেউ ডাকেনি। এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণাও নেই। পেট্রলপাম্পে কাজ করছিলেন পল ডাডলি। অকপটে জানালেন, মে দিবস সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নেই। তিনি বলেন, টেলিভিশনে দেখেছেন রাশিয়া, কিউবা ও ভেনেজুয়েলায় মে দিবসের বিশাল সমাবেশ হয়ে থাকে। নিউজার্সির ক্যাবচালক ওমর ওকস্টা জানান,  কৈশোর কেটেছে কিউবায়। পুঁজিবাদের দেশে এসে ৩০ বছর থেকে একনাগাড়ে কাজ করে যাওয়ার কথা জানালেন এ কিউবান অভিবাসী। তবে  নিজের দেশে কলকারখানা বন্ধ রেখে মে দিবসের উত্সবে যোগ দেওয়ার স্মৃতির কথা জানান তিনি। ট্রাকচালক টম ডাফি। মে দিবস কমিউনিস্টদের দেশে পালন করা হয় বলে তিনি জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের  শ্রমিক সংগঠন, নাগরিক অধিকার সংগঠন তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে দাবি-দাওয়া নিয়ে আওয়াজ তুলে থাকে। এবারের মে দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার দাবি উঠেছে। উদারনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবৈষম্য, পুলিশ নির্যাতন, আয়বৈষম্য এবং যুদ্ধবিরোধিতা নিয়ে আওয়াজ তুলেছে।

No comments: