Custom Search

Tuesday, April 29, 2014

ছাত্রলীগ-কর্মীর পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন, নেতার রগ কর্তন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কুপিয়ে ছাত্রলীগের এক কর্মীর গোড়ালি থেকে দুই পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অপর একজনের হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান ও শহীদ হবিবুর রহমান হলের মাঝামাঝি স্থানে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ ও পুলিশ দাবি করেছে, শিবিরের নেতা-কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছেন।

হামলার শিকার সালেহ মো. টগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক। তিনি ফোকলোর বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর ছাত্রলীগের কর্মী আবদুল্লাহেল মাসুদ ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ঘটনার পরপরই তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁদের অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়।

ঘটনার বিবরণ
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আজ সকাল আটটার দিকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে মাদার বখশ হল থেকে বের হন টগর ও মাসুদ। তাঁদের বহনকারী রিকশাটি শহীদ জিয়াউর রহমান হল ও শহীদ হবিবুর রহমান হলের মাঝামাঝি পৌঁছলে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাঁদের রিকশা লক্ষ্য করে দুটি ককটেল ফাটায়। এ সময় টগর ও মাসুদ পালানোর চেষ্টা করলে হামলাকারীরা মাসুদকে ধরে সেখানে থাকা একটি দোকানের পেছনে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। হামলাকারীরা মাসুদের ডান পায়ের গোড়ালি থেকে পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। একই সময়ে টগরকে রাস্তার একপাশে ফেলে কুপিয়ে জখম করে। তাঁর হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। আশপাশের লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় টগর ও মাসুদকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিত্সাকেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর হামলার স্থানে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। পুলিশ জায়গা দুটি ঘিরে রেখেছে।

শিবিরকে দায়ী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরবিরোধী কর্মকাণ্ডে এ দুজন সব সময়ই সামনে থেকেছে। কয়েক দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি তাঁদের (আহত) দুজনের নাম উল্লেখ করে আমাকে হুমকি দিয়েছিল। তারাই এ হামলা চালিয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত।'

নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, 'শিবির ছাড়া হাত-পায়ের রগ আর কে কাটতে পারে? জামায়াত-শিবিরই এ হামলা চালিয়েছে।' ওসি জানান, হামলাকারীদের ধরতে পুলিশ অভিযানে নেমেছে। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তাত্ক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান বি কে দাম প্রথম আলোকে বলেন, 'মাসুদের ডান পা গোড়ালি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে চামড়ার সঙ্গে ঝুলে ছিল। ডান হাতের কনুই থেকে কবজি পর্যন্ত মারাত্মকভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। ডান হাতেও জখম রয়েছে। দুই হাতেরই রগ কেটে গেছে। টগরের দুই হাত ও দুই পায়ে কুপিয়ে রগ কেটে দেওয়া হয়েছে।' বি কে দাম আরও বলেন, মাসুদের অবস্থা খুবই সংকটজনক। তাঁকে চার ব্যাগ রক্ত দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। টগরের অবস্থা মাসুদের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও আশঙ্কামুক্ত নয়। তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
দলীয় নেতা-কর্মীর ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন। সমাবেশ থেকে হামলাকারী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়। একই দাবিতে আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান সাধারণ সম্পাদক।

No comments: