Custom Search

Tuesday, April 29, 2014

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ- জবাবদিহির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

সাধারণত কোনো দুর্ঘটনার দায় সরকার নিতে চায় না। কিন্তু সাগর উপকূলে ফেরিডুবির ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চাং হং-উন তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতায় ধীরগতি ও ফেরিডুবি রোধে ব্যর্থতার দায় মাথা পেতে নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। যদিও ইউরোপ-আমেরিকায় এ ধরনের পদত্যাগের উদাহরণ প্রচুর, কিন্তু বাংলাদেশে এ রকম ঘটনা বিরল। পদত্যাগের সময় তিনি বলেন, 'ফেরিডুবির পর ১০ দিনেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে, কিন্তু যাঁরা এখনো তাঁদের হারানো স্বজনদের খুঁজে পাননি, তাঁদের কান্নায় আমি রাতে ঘুমাতে পারি না।' কতটা গণতন্ত্রমনা হলে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশবাসীর পাশে দাঁড়াতে পারেন, তা ভাবলে অবাক হতে হয়। তাঁর পদত্যাগ জবাবদিহির একটি নতুন সোপান রচনা করল।
ওই ফেরি দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়, আরও শতাধিক নিখোঁজ। এ ঘটনায় ফেরির পাইলট ও আরও ১৪ জন ক্রু গ্রেপ্তার হন। তাঁদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। আরও বেশি যাত্রী আটানোর জন্য ওই ফেরির মূল কাঠামো পরিবর্তন করার অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে ফেরির ভারসাম্য সরে গিয়েছিল ও এ কারণে এতে যাতায়াত অনিরাপদ হয়ে উঠেছিল বলে ধারণা করা হয়। সে ক্ষেত্রে একে সাদামাটা দুর্ঘটনা বলা চলে না, এটি ছিল মানুষের সৃষ্ট মর্মান্তিক ঘটনা।
প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়াই হলো মূল কথা। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার যদি তাদের নির্বাচকদের চাহিদা পূরণ করতে না পারে, যদি সরকারের ব্যর্থতার জন্য দেশের মানুষের জীবনে দুর্ভোগ নামে, তাহলে তার দায় পড়ে সরকারের ওপরই।
প্রতিবেশী ভারতেও রেল দুর্ঘটনার দায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। অথচ বাংলাদেশে কোনো মন্ত্রী বা আমলাকে দুর্ঘটনার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে দেখা যায় না। এমনকি তারা ব্যর্থতার দায়ও স্বীকার করতে চান না। গত বছর রানা প্লাজা ধসের পর যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ব্যর্থতার দায় মাথা পেতে নিতেন, তাহলে মন্ত্রীবিশেষ বা সরকারের ভাবমূর্তি খাটো হতো না, বরং জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় পাওয়া যেত। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা থেকে আমাদের রাষ্ট্রপরিচালকদের অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে।

No comments: